পরীক্ষার প্রস্তুতির সেরা উপায়
পরীক্ষার প্রস্তুতির সেরা উপায় জানুন: সময়সূচী তৈরি, কার্যকর অধ্যয়ন কৌশল, মানসিক চাপ মোকাবেলা, এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর টিপস সহ সম্পূর্ণ গাইড
পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধু অর্জিত জ্ঞান মূল্যায়নের মাধ্যম নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতিরও একটি ধাপ। পরীক্ষায় সফল হতে গেলে সঠিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া অপরিহার্য। তবে এই প্রস্তুতির গুরুত্ব শুধু ভালো ফলাফলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি শিক্ষার্থীদের মানসিক শক্তি বাড়ায় এবং আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে। পরীক্ষার প্রস্তুতি না থাকলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার সময় নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়, যেমন সময়ের অভাব, প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে অজ্ঞানতা, বা চাপের কারণে মনোযোগ হারানো।
এই প্রবন্ধে পরীক্ষার জন্য সর্বোত্তম প্রস্তুতি নেওয়ার বিভিন্ন কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আমরা দেখব কীভাবে সঠিক পড়াশুনার সময়সূচী তৈরি করা, পরীক্ষার কাঠামো বোঝা, সময় ব্যবস্থাপনা, এবং প্রস্তুতির সেরা পদ্ধতিগুলো কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় সফল হতে পারে।
পরীক্ষার কাঠামো বোঝা
পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করার আগে পরীক্ষার ধরণ এবং কাঠামো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা অপরিহার্য। প্রতিটি পরীক্ষা ভিন্ন ভিন্ন ধরণের প্রশ্ন এবং মূল্যায়ন পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়। সঠিকভাবে পরীক্ষার কাঠামো না বুঝলে পরীক্ষার দিন শিক্ষার্থীরা হতাশায় পড়তে পারে, যা পরীক্ষার ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সিলেবাস ও পরীক্ষার ধরণ বিশ্লেষণ করা
প্রথমেই পরীক্ষার সিলেবাসকে বিশ্লেষণ করতে হবে। কোন অধ্যায় বা বিষয়গুলি বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কোন অংশে বেশি প্রশ্ন আসে, এবং কোন অংশগুলোকে কম গুরুত্ব দেওয়া যায় তা আগে থেকেই বুঝে নেওয়া উচিত। সিলেবাসে যদি বড় বড় অধ্যায় থাকে, তবে সেগুলোকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে পড়া সহজ হয়। এর পাশাপাশি, পরীক্ষার ধরণ বিশ্লেষণ করা জরুরি। প্রতিটি বিষয়ের পরীক্ষার ধরন ভিন্ন হতে পারে—কোন বিষয়ে MCQ প্রশ্ন বেশি থাকে, কোন বিষয়ে বিশদ উত্তর লিখতে হয়, সেটা জেনে রাখা ভালো।
প্রশ্নের ধরন বোঝার গুরুত্ব (MCQ, সংক্ষিপ্ত উত্তর, রচনামূলক, ইত্যাদি)
প্রশ্নের ধরন বোঝা পরীক্ষার প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। MCQ ধরনের প্রশ্নের জন্য শিক্ষার্থীদের দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তথ্য স্মরণ করার ক্ষমতা উন্নত করা প্রয়োজন। এখানে ভুলের সম্ভাবনা বেশি থাকে, কারণ একটি প্রশ্নের জন্য বিভিন্ন উত্তর অপশন দেয়া থাকে। অন্যদিকে, রচনামূলক প্রশ্নের জন্য চিন্তাশক্তি এবং বিশদভাবে ধারণা প্রকাশ করার ক্ষমতা দরকার হয়। তাই কোন প্রশ্নের জন্য কেমন প্রস্তুতি দরকার, তা আগেই ঠিক করে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
পরীক্ষার সময় ব্যবস্থাপনা
পরীক্ষার সময় সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি। পরীক্ষার সময় যদি সঠিকভাবে পরিকল্পনা না করা হয়, তবে শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখতে ব্যর্থ হতে পারে। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করা উচিত। যেসব প্রশ্নের উত্তর শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে জানে, সেগুলোর উত্তর আগে দেওয়া উচিত, তারপর অপেক্ষাকৃত কঠিন প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখার চেষ্টা করা উচিত। সময়মতো পরীক্ষার প্রতিটি অংশ শেষ করার অভ্যাস তৈরি করা জরুরি।
একটি পড়াশুনার সময়সূচী তৈরি করা
পরীক্ষার জন্য ধারাবাহিক পড়াশুনা এবং পরিকল্পনা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। একদিনে সব পড়া সম্ভব নয়, তাই আগে থেকেই পরিকল্পনা করে এবং সঠিক সময়সূচী তৈরি করে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া দরকার।
সঠিক সময়সূচীর গুরুত্ব
পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য একটি সঠিক সময়সূচী বা স্টাডি প্ল্যান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিক্ষার্থীদের সুশৃঙ্খলভাবে পড়াশুনা করতে সাহায্য করে। একবার সময়সূচী তৈরি করে ফেললে, প্রতিদিন কী পড়তে হবে তা নিয়ে আর চিন্তা করতে হয় না। এতে করে অযথা সময় নষ্ট হয় না এবং প্রতিটি বিষয় ধারাবাহিকভাবে কভার করা যায়। সময়সূচী ঠিক করা থাকলে পড়ার গতি এবং সময় ব্যবস্থাপনায় অনেক উন্নতি হয়।
দৈনিক, সাপ্তাহিক, এবং মাসিক লক্ষ্য স্থাপন করা
সময়সূচী তৈরি করার সময় দৈনিক, সাপ্তাহিক, এবং মাসিক লক্ষ্য স্থাপন করা জরুরি। প্রতিদিন কী পরিমাণ পড়াশুনা করা হবে, এক সপ্তাহে কতটুকু পড়া শেষ করতে হবে, এবং এক মাসে পুরো সিলেবাসের কোন অংশ শেষ হবে তা নির্ধারণ করে নেওয়া উচিত। এতে করে ছোট ছোট ধাপে শিক্ষার্থীরা তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। লক্ষ্য না থাকলে পরীক্ষার আগে পুরো সিলেবাস পড়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
বিষয়ের গুরুত্ব এবং কঠিনতার উপর ভিত্তি করে অগ্রাধিকার নির্ধারণ
সময়সূচী তৈরির সময় প্রতিটি বিষয়ের গুরুত্ব এবং কঠিনতার ভিত্তিতে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা উচিত। যেসব বিষয় বেশি কঠিন বা যেগুলোতে বেশি নম্বর রয়েছে, সেগুলো আগে পড়া উচিত এবং বেশি সময় বরাদ্দ করা উচিত। সহজ বিষয়গুলো পরে পড়া যেতে পারে এবং কম সময়ে সেগুলো সম্পন্ন করা সম্ভব।
পড়াশুনার সময় এবং বিশ্রামের মধ্যে ভারসাম্য রাখা
অত্যধিক পড়াশুনার ফলে শিক্ষার্থীরা দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে, যা তাদের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে। তাই সময় সময়ে বিশ্রাম নেওয়া উচিত এবং মনকে রিফ্রেশ করতে হবে। বিরতিহীনভাবে দীর্ঘ সময় পড়াশুনা করলে মনোযোগ কমে যায় এবং পড়া মনে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। ২৫-৩০ মিনিটের পড়ার পর ৫-১০ মিনিটের ছোট বিরতি নিয়ে মস্তিষ্ককে পুনরুজ্জীবিত করা যেতে পারে। বিশ্রাম নিয়ে পড়লে পড়াশুনার কার্যকারিতা বাড়ে এবং শিক্ষার্থীরা নতুন তথ্য দ্রুত গ্রহণ করতে পারে।
কার্যকর অধ্যয়ন কৌশল
পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সফল হতে গেলে কেবল সময় কাটানো নয়, সঠিক ও কার্যকর কৌশলে পড়াশোনা করা প্রয়োজন। সক্রিয় শেখার পদ্ধতি এবং পুনরায় অনুশীলনের মাধ্যমে বিষয়গুলি মস্তিষ্কে গেঁথে দেওয়া যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে মনে রাখা যায়। নিচে কিছু কার্যকর অধ্যয়ন কৌশল বর্ণনা করা হলো।
সক্রিয় শেখা বনাম প্যাসিভ পড়া
প্যাসিভ পড়া বলতে বোঝায় সাধারণত বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানো বা শুধু পড়া ছাড়া অন্য কোনো চিন্তাশক্তি প্রয়োগ না করা। এতে অনেক সময় শিক্ষার্থীরা ভুল ধারণা পোষণ করে যে তারা যথেষ্ট পড়াশোনা করছে, কিন্তু পরে দেখা যায়, তারা প্রয়োজনীয় তথ্য মনে রাখতে ব্যর্থ হয়।
সক্রিয় শেখা, এর বিপরীতে, শিক্ষার্থীর চিন্তাশক্তি এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের উপর নির্ভর করে। পড়ার সময় প্রশ্ন করা, মূল বিষয়গুলো মনে রেখে সংক্ষেপে নোট নেওয়া, এবং নিজের ভাষায় বিষয়টি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা সক্রিয় শেখার অংশ। সক্রিয় শেখার মাধ্যমে বিষয়গুলো মস্তিষ্কে গভীরভাবে গেঁথে যায় এবং পড়া মনে রাখা সহজ হয়।
SQ3R (Survey, Question, Read, Recite, Review) কৌশল প্রয়োগ
এই পদ্ধতি পড়ার সময় সক্রিয়ভাবে মনোযোগ ধরে রাখতে এবং বিষয়টি সহজে আয়ত্ত করতে সাহায্য করে। এর ধাপগুলো হলো:
- Survey (পর্যবেক্ষণ): প্রথমে অধ্যায়টি দ্রুত দেখে নেওয়া। বড় বড় শিরোনাম, উপশিরোনাম এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলির দিকে নজর দেওয়া।
- Question (প্রশ্ন করা): প্রতিটি শিরোনাম বা উপশিরোনামের নিচে প্রশ্ন তৈরি করা। এই ধাপে শিক্ষার্থী নিজেই জানতে চায় যে বিষয়টি কী বোঝাচ্ছে।
- Read (পড়া): অধ্যায়টি মনোযোগ দিয়ে পড়া এবং সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা।
- Recite (আবৃত্তি করা): প্রতিটি অংশ পড়া শেষে সেটা মুখস্থভাবে নিজের ভাষায় বলে যাওয়া।
- Review (পুনর্বিবেচনা করা): পুরো অধ্যায়টি শেষ হলে সারাংশের দিকে নজর দেওয়া এবং পূর্ববর্তী পড়াগুলোর রিভিউ করা।
নোট তৈরি এবং মূল পয়েন্টগুলি সংক্ষেপে লেখা
পড়ার সময় মুখস্থ না করে, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো নোট করে রাখার অভ্যাস করা উচিত। সংক্ষেপে মূল পয়েন্টগুলো নিজের ভাষায় লিখে রাখা গেলে সেগুলো সহজে মনে রাখা যায় এবং পরীক্ষার সময় পুনরাবৃত্তি করার সময়ও সহায়ক হয়।
মানচিত্র, চার্ট, এবং ফ্ল্যাশকার্ডের মতো ভিজ্যুয়াল সহায়তা ব্যবহার করা
মানচিত্র, চার্ট, এবং ফ্ল্যাশকার্ডের মতো ভিজ্যুয়াল সহায়তা শিক্ষার্থীদের বিষয়গুলোকে চোখে দৃশ্যমান করার সুযোগ দেয়। এটি কঠিন বা জটিল বিষয় সহজে মনে রাখতে সহায়ক হয়। ফ্ল্যাশকার্ডের মাধ্যমে দ্রুত ছোট ছোট তথ্য আয়ত্ত করা যায়, যেমন তারিখ, সংজ্ঞা, সূত্র ইত্যাদি। মানচিত্র ও চার্টের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করা সহজ হয়।
দলগত পড়াশুনার মাধ্যমে সহযোগী শিক্ষা
দলগত পড়াশুনা শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক হতে পারে, কারণ এতে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়গুলো বোঝার সুযোগ হয়। শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়ের জটিলতা দূর করতে পারে এবং একে অপরের ভুল ধরিয়ে দিয়ে সমাধান খুঁজে নিতে পারে। দলগত অধ্যয়নে একজন শিক্ষার্থী অন্যকে পড়ানোর চেষ্টা করলে তার নিজের শেখার প্রক্রিয়াও শক্তিশালী হয়।
অনুশীলন ও পুনর্বিবেচনা
পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নপত্র এবং মক টেস্ট সমাধান করা
অনুশীলনের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নপত্রগুলো সমাধান করা সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতিগুলির মধ্যে একটি। এতে পরীক্ষার ধরণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এবং শিক্ষার্থীরা জানতে পারে কোন ধরনের প্রশ্নের কীভাবে উত্তর দিতে হবে। মক টেস্টও প্রস্তুতির জন্য খুবই উপকারী। এতে করে পরীক্ষার আগে টাইম ম্যানেজমেন্ট এবং সঠিক উত্তর প্রদানের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
কুইজ এবং সময়সীমার ভিত্তিতে অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে পরীক্ষা করা
অনুশীলনের সময় কুইজ তৈরি করে বা সময় বেঁধে নিজেকে পরীক্ষা করা উচিত। এতে পরীক্ষার সময় চাপের মধ্যে কেমন পারফর্ম করা যায় তা বোঝা সম্ভব হয়। এছাড়াও, সময়মতো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার দক্ষতা বাড়ে এবং ভুল থেকে শিখতে সুযোগ পাওয়া যায়।
ভুল বিশ্লেষণ এবং ধারণা পরিষ্কার করা
পড়াশুনার সময় যে ভুলগুলো হয় সেগুলো বারবার বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। এতে করে ভবিষ্যতে একই ধরনের ভুল এড়ানো সম্ভব হয় এবং দুর্বলতা দূর করা যায়। প্রতিটি ভুল থেকে শিক্ষার মাধ্যমে বিষয়ের উপর ভালোরকম দখল প্রতিষ্ঠিত হয়।
পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় সুস্থ থাকা
পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং পানি পান করার গুরুত্ব
পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা মানসিক ও শারীরিক শক্তি বাড়ায়। ভালো খাবার মনকে সতেজ রাখে এবং পড়ার সময় মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সাথে পড়াশুনার সমন্বয় রাখা
শারীরিক ব্যায়াম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং চাপ কমাতে সহায়ক। তাই পড়াশুনার মাঝে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা উচিত। ব্যায়াম বা হেঁটে আসা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বাড়ায় এবং ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।
মনোযোগ বজায় রাখা এবং মানসিক চাপ কমানোর জন্য পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম নিশ্চিত করা
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মনোযোগ হ্রাস পায় এবং পরীক্ষার প্রস্তুতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত। ঘুম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং পড়ার সময় মনোযোগ বজায় রাখতে সহায়ক হয়।
পরীক্ষার উদ্বেগ মোকাবেলা
পরীক্ষার সময় অনেক শিক্ষার্থীই উদ্বেগ ও মানসিক চাপের শিকার হয়। এই উদ্বেগ যদি ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে পরীক্ষায় ভালো ফল করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে এই উদ্বেগ মোকাবেলা করে পরীক্ষায় সফল হওয়া সম্ভব।
মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমানোর কৌশল
পরীক্ষার সময় মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। এগুলো হলো:
-
গভীর শ্বাস: গভীর শ্বাস নেওয়া মানসিক চাপ কমানোর জন্য খুব কার্যকরী একটি পদ্ধতি। এটি মনকে শান্ত করে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে উদ্বেগ দূর করে। পরীক্ষা শুরুর আগে কিছুক্ষণের জন্য গভীর শ্বাস নিয়ে মস্তিষ্ককে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা যায়।
-
ধ্যান: ধ্যান মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং মনের স্থিরতা বাড়ায়। নিয়মিত ধ্যানের অভ্যাস পরীক্ষার আগের উদ্বেগ হ্রাস করতে সহায়ক হতে পারে।
-
পজিটিভ ভিজ্যুয়ালাইজেশন: পজিটিভ ভিজ্যুয়ালাইজেশন অর্থাৎ নিজের সফলতা কল্পনা করা, পরীক্ষায় সফল হওয়ার চিত্র মানসিকভাবে কল্পনা করা উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
ইতিবাচক মনোভাব এবং অনুপ্রেরণা বজায় রাখা
পরীক্ষার সময় ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা পরীক্ষার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই সব সময় নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখা এবং ইতিবাচকভাবে চিন্তা করা উচিত। আত্মবিশ্বাসী মনোভাবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা চাপকে দূরে রাখতে পারে এবং পরীক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে পারে।
প্রস্তুতির মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস তৈরি করা
আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় সঠিক প্রস্তুতির মাধ্যমে। শিক্ষার্থীরা যদি যথাযথভাবে প্রস্তুতি নেয় এবং বিষয়গুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে, তবে তারা পরীক্ষার সময় আত্মবিশ্বাসী থাকে। প্রস্তুতির সময় যা যা শেখা হয়েছে, তা পরীক্ষা দেওয়ার সময় সফলতার সঙ্গে কাজে লাগানো যায়। সঠিক প্রস্তুতি মানসিক চাপ দূর করে এবং পরীক্ষা দেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের স্বস্তিতে রাখে।
শিক্ষক ও পরামর্শদাতার ভূমিকা
সন্দেহ দূর করার জন্য শিক্ষকের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ
শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা সম্পর্কিত যেকোনো সন্দেহ দূর করতে শিক্ষকের সহায়তা নেওয়া উচিত। পরীক্ষার আগে যেসব বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই, সেগুলো শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করে স্পষ্ট করে নেওয়া প্রয়োজন। এতে পরীক্ষার সময় সংশয় দূর হয় এবং সঠিক উত্তর দেওয়া সহজ হয়।
অধ্যয়নের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ, অনলাইন টিউটোরিয়াল এবং একাডেমিক ফোরামের সঠিক ব্যবহার
শিক্ষক ছাড়াও অনলাইন টিউটোরিয়াল এবং একাডেমিক ফোরামের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। ইন্টারনেটে প্রচুর উপকরণ পাওয়া যায় যা পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়ক হতে পারে। অনলাইন ফোরামে শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়বস্তু স্পষ্ট করতে পারে।
পরীক্ষার দিন সংক্রান্ত টিপস
পরীক্ষার দিনটি সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা অত্যন্ত জরুরি। কিছু টিপস অনুসরণ করে পরীক্ষার দিন সফলভাবে পার করা সম্ভব।
পরীক্ষার আগের রাতে প্রস্তুতি
পরীক্ষার আগের রাতেই সব কিছু ঠিকঠাক গুছিয়ে রাখা উচিত। পড়াশুনার পাশাপাশি বিশ্রাম নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভালো ঘুম পরীক্ষার দিন মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রস্তুত রাখা
পরীক্ষার আগের রাতেই আইডি কার্ড, কলম, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ঠিক করে রাখা উচিত, যাতে পরীক্ষার দিনে এগুলো খোঁজাখুঁজি করতে না হয়।
পরীক্ষার সময় স্থির থাকা এবং মনোযোগ বজায় রাখা
পরীক্ষার সময় মনোযোগ ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমেই প্রশ্নগুলো দেখে নেওয়া উচিত এবং যেগুলো সহজে উত্তর দেওয়া যায়, সেগুলো আগে সমাধান করা উচিত। পরীক্ষা চলাকালীন নিজের উপর চাপ না নিয়ে ধীরে ধীরে সঠিকভাবে উত্তর দেওয়া প্রয়োজন।
What's Your Reaction?